চট্রগ্রাম প্রতিনিধিঃ জনমত গঠনে সাংবাদিকদের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি উল্লেখ করে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন চ্যালেঞ্জিং কাজ। সাংবাদিকরা যেভাবে লিখবেন, উপস্থাপন করবেন সেভাবেই জনমত গড়ে ওঠে। এ কারণে অনেক সময় পাঠকের মধ্যে বিভক্তি-বিভাজন তৈরি হয়। আমি মনে করি, আমাদের শেষ ভরসাস্থল আপনারাই (সাংবাদিক)।
ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনকালে মেয়র এসব কথা বলেন। শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) প্রেসক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন কমোডর এডব্লিউ চৌধুরী বীর উত্তম, বীর বিক্রম।
মেয়র বলেন, সাংবাদিকরা গুরু দায়িত্ব, কঠিন দায়িত্ব ও চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব পালন করছেন। ব্যক্তিগতভাবে কারও প্রতি পছন্দ থাকতে পারে, কোনো দলের প্রতি দুর্বলতা থাকতে পারে, এমনকি আঞ্চলিকতার প্রতিও দুর্বলতা থাকতে পারে। এটি বাস্তবতা। সাংবাদিকদের এ বাস্তবতার ঊর্ধ্বে উঠে দায়িত্ব পালন করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
রাজনৈতিক অবক্ষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে আত্মসমালোচনার তাগিদ দিয়ে মেয়র বলেন, চার ঘণ্টার মিটিংয়ে দেড়-দুই ঘণ্টা চলে যায় অতিথিদের নামের আগে বিশেষণ ও প্রশংসা করতেই। ছাত্রজীবনে আমরা যখন রাজনীতি করতাম তখন প্রচুর বক্তৃতা শুনতাম। সাধারণ মানুষ বক্তৃতা শুনতেন। স্বাধীনতার আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি সভা-সমাবেশ হচ্ছে। সেই হিসেবে মূল্যবোধ শাণিত হওয়ার কথা। কিন্তু এখন রাস্তার পাশে সভা চলে, পাশ দিয়ে সবাই চলে যায়। সাধারণ মানুষ বক্তৃতা শুনতে আসে না। তাদের ধারণা হয়তো, বক্তৃতা শোনা মানে সময় নষ্ট করা।
তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা অনেক। আমরা বাঙালি। রাজনৈতিক মতাদর্শে পার্থক্য থাকতে পারে। আমাদের দেশ এগিয়ে যাক-এ মৌলিক প্রত্যাশায় পার্থক্য আছে বলে মনে করি না। তাই দেশ বিনির্মাণে সব সংকীর্ণতা পরিহার করে আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যেতে হবে। নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। আমাদের ঐতিহ্য, ইতিহাস জানা প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব। শুধু সরকারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছা যাবে না। আইন প্রয়োগ যেমন প্রশাসনের দায়িত্ব তেমনি আইন মেনে চলাও নাগরিকের দায়িত্ব।
মেয়র বলেন, বিদেশে এত ট্রাফিক পুলিশ থাকে না। কিন্তু সেখানে রাস্তায় ক্যামেরা বসানো আছে। বাঙালি চালকেরা ক্যামেরার আওতা পেরোলেই বেশি স্পিডে গাড়ি চালান। আইন মেনে চলার প্রবণতা বাঙালির কম।
দেশকে এগিয়ে নিতে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব অগ্রণী ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম সবসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবও অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
প্রেসক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ারের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধন পর্বে স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহসভাপতি শহীদ উল আলম ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে আবৃত্তিশিল্পী ফারুক তাহেরের নির্দেশনায় বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করে প্রেসক্লাব সদস্যের সন্তানরা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ।
বিকেলে সাংগঠনিক অধিবেশন এবং শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) দ্বিবার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবার ১৫ পদে ৩৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।